Institute Info

Satkhira Govt. High School

টাউন হাইস্কুল থেকে

সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

 

টাউন হাইস্কুল নামক শিশুটি জন্মগ্রহণ করে যে একদিন দেশের এক স্বনামধন্য টগবগে যুবক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এ যেন ছিল বিধাতার ইচ্ছার এক পরিকল্পিত স্কেচম্যাপ। ১৮৬২ সালে স্থাপিত সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ প্রান্তের প্রচীনতম বিদ্যাপীঠ প্রাণ নাথ (পি.এন) হাইস্কুলটি ছিল সাতক্ষীরা শহর তথা ৮-১০ মাইল ব্যাপী শহরতলী এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার একমাত্র মাধ্যমিক স্কুল। অনেক দূর থেকে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে এই স্কুলে আসত। বিষয়টি নিয়ে বৃহত্তর খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক, “নিউ বুক হাউজ” এর মালিক ও প্রাক্তন শিক্ষক জনাব মোঃ সোলায়মান (পলাশপোল), বিদ্যানুরাগী জনাব আহমদ আলী এধরনের কয়েকজন সমমনা ব্যক্তি শহরের উত্তর প্রান্তে আর একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছিলেন। এদিকে প্রাণ নাথ (পি.এন) হাই স্কুলের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক জনাব এ.কে.এন সিদ্দিক উল্লাহ মহোদয় আমত্রণ না পাওয়ায় তিনি অনেকটা মনঃকষ্টে ভুগছিলেন। অপমান ও মনঃকষ্টের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তিনি সাতক্ষীরাতে পি.এন হাই স্কুলের পাশাপাশি  আরও একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকর কথা চিন্তা করছিলেন। সোনায় সোহাগার মত স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের চিন্তার সাথে সিদ্দিকুল্লাহ সাহেবের মণঃকষ্টের মিলন ঘটিয়ে শুরু হলো সাতক্ষীরা টাউন হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ। খুলনা সাতক্ষীরা প্রধান সড়কের পূর্ব পার্শে যেখানে প্রধান শিক্ষকের বর্তমান সরকারি বাস ভবন ঐ এলাকায় চাচেঁর বেড়া ও গোলপাতার ছাউনি বিশিষ্ট কক্ষ দিয়ে স্কুলের গোড়া পত্তন করা হয়।

* শুরুতেই প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু হয় এবং স্থানীয় জনগনের চাহিদার প্রেক্ষিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কো-এডুকেশন রাখা হয়।

* তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জনাব আলী আহম্মদ স্কুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ।

* বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিষ্টারে প্রথম ছাত্র হিসেবে নাম লিপিবদ্ধ করা হয় লিয়াকত আলি খান পিয়ারা।

* ১লা জুলাই ১৯৬২ সাল  সাতক্ষীরা টাউন হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রথম পরিচালনা পরিষদ (ম্যানেজিং কমিটি) তৈরি হয় এরকম-

সভাপতিঃ         জনাব এ.কে.এন সিদ্দিক উল্লাহ,  মহকুমা প্রশাসক, সাতক্ষীরা।

সম্পদকঃ          জনাব মোঃ সোলায়মান 

সদস্যঃ  জনাব আব্দুল গফুর এম.এন.এ

,,        জনাব আব্দুল আহাদ খান

,,        জনাব হায়দার আলী খান

,,        জনাব আবুল ওয়ারেস খান

,,        জনাব আহম্মদ আলী

          ,,        জনাব আরিফ খান

          ,,        জনাব আব্দুল ওহিদ খান

স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্নে যারা প্রথম শিক্ষক কর্মচারী হিসেবে যোগদান করেন তারা হলেন-

প্রধান শিক্ষকঃ   জনাব শেখ আব্দুল করিম,

সহকারী শিক্ষকঃ          জনাব মোঃ ইউনুস আলী, পুরাতন সাতক্ষীরা।

 ,,       ,,                 জনাব মোঃ মহাতাব মল্লিক, মল্লিক পাড়া।

 ,,       ,,                 জনাব এ.বি.এম কোরবান আলী, বাটকেখালী।

 ,,       ,,                জনাব জহুরুল হুদা, দেবহাটা।

 ,,       ,,                জনাব মাহবুব হোসেন, পুরাতন সাতক্ষীরা।

 ,,       ,,                জনাব আব্দুর রহমান, ইটাগাছা।

 ,,       ,,                জনাব আব্দুল হক খান চৌধুরী, কাটিয়া।

অফিস সহকারীঃ জনাব আব্দুল কাইয়ুম,

পিয়নঃ            জনাব মীর আবদুল আলিম, লাবসা।

 

বিদ্যালয়ের মোট জমি ৯ একর ৫৬ শতক।এর মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জনাব মোঃ সোলায়মান দান করেন ৮৭ শতক, সদস্য জনাব আহম্মদ মিয়া দান করেন ২বিঘা, অবশিষ্ট ৭ একর ২ শতক জমি স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়।উক্ত অধিগ্রহণকৃত জমি বিঘা প্রতি ৭১৫(সাত শত পনের) টাকা দাম ধরে যে মূল্য হয় তা সভাপতি জনাব এ.কে.এন সিদ্দিক উল্লাহ মহোদয়ের অনুরোধক্রমে জনাব আব্দুল গফুর এম.এন. এ (বাটকেখালী)ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দান হিসেবে পরিশোধ করেন।

 

বিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠ এলাকা জনাব আব্দুল দালাল, বর্তমান বিদ্যালয় ভবন এলাকা জনাব দীনেশ চন্দ্র দত্ত (কর্মকার), সন্মুখভাগে দক্ষিণ পার্শের মাঠ এলাকা জনাব মোঃ আবেদার রহমান ও জনাব আনন্দ।

 জনাব শেখ আব্দুল করিম ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম প্রধান শিক্ষক । তার পর পর্যায়ক্রমে জনাব প্রতাপ চন্দ্র (পি.সি) পাটওয়রি, জনাব শেখ গহর আলি, জনাব মোঃ আবুল হোসেন, এরপর ১লা মে ১৯৬৮খ্রীঃ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলে ০৩রা মে ১৯৬৮ খ্রীঃ জনাব আজিজুর রব প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

তিনি অতীব দক্ষতার সাথে আট মাস দায়িত্ব পালন করার পর ১৫জানুয়ারি ১৯৬৯ খ্রীঃ প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন জনাব মোঃ আব্দুর রশিদ। তিনি ছিলেন ৫ বছর। অতঃপর জনাব আবুল হোসেন পদন্নতি পেয়ে ০৮ ডিসেম্বর ১৯৭৩ খ্রীঃ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসেন। এরপর তাঁর বদলীজনিত কারণে ২৮ মার্চ ১৯৭৮ তারিখে এ.এইচ.এম মোস্তাফিজুর রহমান খান বিদ্যালয়ে প্রধানের দায়িত্বে আসেন।তিনি একাধারে ১২ বছর অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেন। এসময়টিকে বিদ্যালয়ের স্বর্ণযুগও বলা যায়। এ.এইচ.এম মোস্তাফিজুর রহমান খান সাহেবের অবসর জনিত কারণে ৩০ এপ্রিল ১৯৯০ খ্রীঃ জনাব মোঃ হাবিবুল হুসাইন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এরপর ০৭ মে ১৯৯১ খ্রীঃ মিঃ নরেন্দ্র কুমার ভট্টাচর্য প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরুপে ধারাবাহিকভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ও পূর্ণ হতে থাকে।

ক্রমি

প্রধান শিক্ষক

দায়িত্ব কাল

হইতে

পর্যন্ত

 

জনাব শেখ আব্দুল করিম

 

 

 

জনাব প্রতাপ চন্দ্র (পি.সি) পাটওয়রি,

 

 

 

জনাব শেখ গহর আলি,

 

 

 

জনাব মোঃ আবুল হোসেন

 

 

 

জনাব আজিজুর রব

৩০.০৫.১৯৬৮

১৪.০১.১৯৬৯

 

জনাব মোঃ আব্দুর রশিদ-

১৫.০১.১৯৬৯

০৭.১২.১৯৭৩

 

জনাব মোঃ আবুল হোসেন-

০৮.১২.১৯৭৩

২৭.০৩.১৯৭৮

 

জনাব এ.এইচ.এম মোস্তাফিজুর রহমান খান

২৮.০৩.১৯৭৮

২৯.০৪.১৯৯০

 

জনাব মোঃ হাবিবুল হুসাইন (ভারপ্রাপ্ত)

৩০.০৪.১৯৯০

২৭.০৬.১৯৯১

 

মিঃ নরেন্দ্র কুমার ভট্টাচর্য  (ভারপ্রাপ্ত)

২৮.০৬.১৯৯১

১২.১০.১৯৯৩

 

মিঃ নরেন্দ্র কুমার ভট্টাচর্য

১৩.১০.১৯৯৩

১৪.০৩.১৯৯৫

 

জনাব মোঃ হাবিবুল হুসাইন  (ভারপ্রাপ্ত)

১৫.০৩.১৯৯৫

১৮.০৬.১৯৯৫

 

জনাব মনোরঞ্জন বিশ্বাস

১৯.০৬.১৯৯৫

১৭.০২.১৯৯৭

 

জনাব মোঃ হাবিবুল হুসাইন  (ভারপ্রাপ্ত)

১৮.০২.১৯৯৭

৩১.০৩.১৯৯৮

 

জনাব মোঃ হাবিবুল হুসাইন

০১.০৪.১৯৯৮

৩০.০৮.১৯৯৯

 

জনাব মো সৈয়দ আলী মোড়ল

৩০.০৮.১৯৯৯

১৭.০১.২০০২

 

জনাব আবুল কাশেম (ভারপ্রাপ্ত)

১৭.০১.২০০২

২৮.১১.২০০২

 

মোহেব্ব-আল্লাহ আনসারী  (ভারপ্রাপ্ত)

২৮.১১.২০০২

০৮.০৫.২০০৩

 

জনাব মিসেস হাসিনা বানু

০৮.০৫.২০০৩

২০.০৪.২০০৫

 

জনাব নূর মোহাম্মদ

২০.০৪.২০০৫

৩০.১২.২০০৬

 

আমিনুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত)

৩১.১২.২০০৬

২০.০৯.২০০৭

 

জনাব আমিনুল ইসলাম টুকু (ভারপ্রাপ্ত)

২০.০৯.২০০৭

২৯.১২.২০১০

 

জনাব আমিনুল ইসলাম টুকু

৩০.১২.২০১০-

২২.০৯.২০১১

 

আমিনুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত)

২২.০৯.২০১১

১৯.১২.২০১১

 

জনাব নূর-ই-আলম মোর্শেদা

১৯.১২.২০১১

১২.১১.২০১২

 

জনাব জনাব আমিনুল ইসলাম টুকু

১২.১১.২০১২

06.08.2014

  1.  

জনাব এ. কে. এম গোলাম আযম

06.08.2014

27.12.2014

  1.  

জনাব মনোয়ারা খাতুন

27.12.2014

16.10.2019

  1.  

জনাব সমরেশ কুমার দাশ (ভারপ্রাপ্ত)

16.10.2019

অদ্যাবধি

 

তৎকালীন সাতক্ষীরা মহকুমায় একটি স্কুল জাতীয় করণের প্রস্তাব এলে পি.এন হাই স্কুলের নাম সর্বাগ্রে ও পাশাপাশি টাউন হাই স্কুলের কথাও আলোচনা হতে থাকে। প্রাথমিকভাবে উভয় স্কুলের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হলেও পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের স্থাবর সম্পত্তি চিরতরে সরকারের কাছে ন্যাস্ত করা, কোন কোন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা গ্রাজুয়েশন বা বি.এড নাথাকায় চাকুরি হারানো  ও বিশেষকরে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের কতৃত্ব হারানোর আশঙ্কায় জাতীয়করণের বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে। এহেন প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে অনেকটা চড়াই উতরাই পরিয়ে টাউন হাই স্কুলের কর্তব্যরত প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আবুল হোসেন, সহকরী শিক্ষক জনাব মোঃ হাবিবুল হুসাইন ও পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১লা মে ১৯৬৮ তারিখে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়ে সাতক্ষীরা সরকারি টাউন হাই স্কুল নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে ০১লা জানুয়ারি ১৯৬৯ খ্রীঃ থেকে বিদ্যালয়টি “সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়” নামে নামকরণ করা হয় এবং একই সঙ্গে ১ম ও ২য় শ্রেণি উঠিয়ে দিয়ে পঞ্চম শেণি পর্যন্ত কো-এডুকেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাতীয়করণ হওয়ায় বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক কর্মচারি চাকুরি হারাননি তবে সরকারি হওয়ায় বিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল হোসেন সাহেবের পদটি খর্ব হয়ে সহকরী প্রধান শিক্ষক পদ হয়।

বিদ্যালয়ে ছাত্রাবসের জন্য

 

 বরাদ্ধ এলে ছাত্রাবাসটি বর্তমান অবস্থানে নির্মিত হওয়ার কথা চূড়ান্ত হলেও ছাত্রদের চলাফেরার কারণে ছাত্রাবাস এলাকার আবাসিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে এলাকার কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি তা নির্মানের জন্য বিদ্যালয়ের ফুটবল খেলার মাঠে নির্মানের সিদ্ধান্ত দেয়। সেই মোতাবেক সেখানে বিল্ডিংয়ের ভিতের জন্য গর্ত তৈরি ও ইট সলিং দেওয়ার পরও বিদ্যালয়ের সহকরী শিক্ষক জনাব মোঃ হাবিবুল হুসাইন এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ফুটবল মাঠটির সৌন্দর্যহানি না করে ছাত্রাবসের জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করে অনেকের বিরাগভাজনও হন। শুধু তাই নয় পরবর্তিতে ছাত্রাবসের উন্নয়নের জন্য ১৯৭৩ সালে টেষ্ট রিলিফের বরাদ্ধথেকে পাওয়া ২৯৪০(দুই হাজার নয় শত চল্লিশ) টাকা দিয়ে জনাব মোঃ হাবিবুল হুসাইন ছাত্রাবসের সন্মুখস্থ পুকুর খনন, পুকুরের পাকাঘাট তৈরি ও ঘাটের পার্শে নামাজের জন্য জায়গা তৈরি করেন।

* জাতীয়করণের পূর্বে বিদ্যালয়ের মূল ভবন তৈরির সময় সকল শিক্ষক কর্মচারী বিশেষ করে শিক্ষক অনাথবন্ধু বোস স্যার ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে সশরীরে রাজমিস্ত্রিদের সাথে ছাদ ঢালাইয়ের  কজে অংশ নেন। এধরণের অনেক সুচিন্তা ও শ্রমের ফসল দেশের দক্ষিণ জনপদের  আজকের এই সনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি।

কবিগুরুর কথায় বলতে হয়, “শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে”। এলেখার বাইরে অনেক ঘটনা অনেক স্মৃতি অব্যক্ত রয়ে গেল। ভবিষ্যতে সেসব যুক্ত হয়ে বিদ্যালয়টির ইতিহাস পূর্ণতা পাবে আশা করি।

”সম্পাদনায়ঃ মোস্তফা খাইরুল আবরার, সহকারী শিক্ষক”

  ঘড়ি এবং ভিজিটর

মোট ভিজিটর

website counter